অঙ্কন নন্দী









বধ্যভূমি

দাঁড়িয়ে আছি অনেকটা সময়,
যেন অনন্তকাল-
ঘড়ির কাঁটা হামাগুড়িরত কালের গন্ডিতে,
মূহূর্তগুলো বৎসরসম দীর্ঘ,
যেন আটকে গেছে কোন অদৃশ্য নিকষ বলয়ে;
চোখে বাঁধা কালো পট্টির আড়ালে-
ঝড়ছে স্বেদবিন্দুগুলো চুপসে গড়িয়ে,
বুকে যেন টেনে নেয়া বাতাসের বাড়াবাড়ি চাপ!
আর নিস্তব্ধ চরাচরে কানে বাজে-
স্বীয় হৃদয়ের মিতব্যয়ী ধুকপুক;
জড়ো করে হাতে বাঁধা রশিটা-
আরো খানিক এঁটো হয়ে বসে আচমকাই,
পুরো সাহারাই যেন সেঁধিয়ে গলায়-
চাইচে একআঁজলা তৃষ্ণার জল;
শব্দ বলতে মাথার উপরে পরিক্রমণে রত-
একদল শিকারী শকুন,
ধৈর্য্য হারিয়ে করছে বিলাপ- আমার রক্তস্বাদের কামনায়;
প্রতীক্ষায় যেন আমিও-
এক তপ্ত সীসার আগমনীর,
যে করে যাবে আমায় এঁফোড় ওঁফোড়!
আমার সাধের দেহ ছুঁড়ে-
প্রাণটাকে ছোঁ দিয়ে কেড়ে নেবে অবলীলায় ।।

৫২ থেকে আজও আমি দাঁড়িয়ে সেই ঠাঁই,
বধ্যভূমির বুকে আমি-
কিংবা আমার বুকেই বধ্যভূমি!
চারটে দশক পেরিয়ে আজও প্রহর গুণি-
প্রাণনাশী বুলেটের,
পাক-রাইফেলে না হোক, স্বদেশী যুবকেরই সই!

আমি বাংলা বলছি-
আমি বাংলাদেশ বলছি,
হবই রঞ্জিত আমি শোণিতের প্রস্ববণে,
হাজার গুলির ক্ষত নিয়ে পড়ব টলে-
আমারই সন্তানের রক্তার্জিত বধ্যভূমিতে;
সেদিন বাংলার মৃত্যুতে যদি টনক কাঁপে বঙ্গসন্তানের;
যেনো একটি স্বাধীনতার অপমৃত্যুই ঘটল-
গোচরে বা অগোচরে ।।

শোন হে সন্তান তবে-
বধ্যভূমির রক্তে ভেজা মৃত্তিকায় যেন বুনো না
কোন নবস্বপ্নের অঙ্কুর ।।




স্বাধীনতার অপসংজ্ঞা

বাহান্ন হয়নি দেখা আমার,
দেখিনি ঊনসত্তর, কিংবা রণবেশে একাত্তর;
কালরাত পঁচিশে আমি থাকতে পারিনি-
শকুনের ক্ষুধার্ত ঠোঁটের সামনে;
আমার কলিজা তাই ঠোকরাতে পারেনি ওরা-
উদভ্রান্ত ঈর্ষায়।
নয় মাস কাদামাখা মুখে আমি-
পোকায় সয়লাব ভাত-রুটি খাইনি,
শরীরে আমার তন্নতন্ন করে খুঁজেও পাওয়া যাবেনা-
বেয়নেটের রক্তলোভী খোঁচা,
সিগারের মাংসপোড়া চুম্বনের দাগ।।

গণতন্ত্রের মুখস্হ সংজ্ঞা
বইয়ের পাতা থেকে চুকলি করে শুধু-
পূর্ণ করেছি পরীক্ষার খাতার সাদা হৃদয়,
বুকে পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান নিয়ে-
লাল আলপনা আঁকিনি রাস্তায়;
শরীরে আঁকা হয়নি কখনো-
চাপাতির ধারালো আঘাতে
মুত্যুময় ট্যাটু।।

সেকারণেই কি এখন-
স্বাধীনতা বলতে বুঝি আমি, প্রকাশ্যে রক্তপান!
স্বাধীনতা মানে কি, বরফকুচি গ্লাসে সততার ককটেল?
কিশোরীর সতীত্বে পৌরুষের স্বেচ্ছাচারী প্রমাণ?
কিংবা, রাজপথ সভায় গলা ফাটিয়ে স্লোগানে স্লোগানে-
বাবা হত্যাকারীর মুক্তির দাবি!
রঙিন কালিতে রাতভর আঁকা-
‘যুদ্ধাপরাধীর মুক্তি চাই’ ফেস্টুন আঁকাই কি স্বাধীনতা?

এই যদি হয় তো-
নাচতে নেমে ঘোমটা করে কি লাভ!

শহীদের রক্তমাখা তোদের ঐ হাতে দেয়া-
ভড়ংয়ের ফুল সব ছুঁড়ে ফেলে,
শহীদ বেদীতে একটা মাস্টার ফ্ল্যাট করার স্বাধীনতা তো-
পেতেই পারি আমি…!

চট্টগ্রাম ।


Previous Post Next Post

বিজ্ঞাপন