প্রিয়দীপ













প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ খোশবাসপুর গ্রামে ১৯৩০ সালে ১৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন ৷ প্রথম জীবনে বাড়ি থেকে পলাতক কিশোরের জীবন অতিবাহিত করেছেন ৷

ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতির হাত ধরে পৌঁছেছিলেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘের আঙিনায়। তবে তার আগেই গ্রামেগঞ্জে গানের দলে সঙ্গে ঘুরে ঘুরে গান লেখার অভ্যেসটা তাঁর রপ্ত হয়ে গিয়েছিল। একসময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে নাম লিখিয়ে ছিলেন আলকাপের দলে। ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার প্রত্যন্ত প্রান্তে। জীবন দিয়ে চেনা বাংলার গ্রামের সেই গন্ধকে এক আলোআধারি ভাষায় নাগরিক পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।

তাঁর “ইন্তি, পিসি ও ঘাটবাবু”, “ভালোবাসা ও ডাউনট্রেন”, “তরঙ্গিনীর চোখ”, “জল সাপ ভালোবাসা“, “হিজলবিলের রাখালেরা”, “রণভূমি”, “উড়োপাখির ছায়া”, “রক্তের প্রত্যাশা”, “মৃত্যুর ঘোড়া”, “গোঘ্ন”, “রানীরঘাটের বৃত্তান্ত” ইত্যাদিসহ অসংখ্য ছোটগল্পের জন্য বিশ্বসাহিত্যের দরবারে স্থায়ী আসন পেয়েছেন ৷

সিরাজের প্রথম মুদ্রিত উপন্যাস – “নীলঘরের নটী” প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকমহলে সাড়া পড়ে যায়। একের পর এক প্রকাশিত হয় “পিঞ্জর সোহাগিনী”, “কিংবদন্তীর নায়ক”,“হিজলকন্যা”, “আশমানতারা“, “উত্তর জাহ্নবী”, “তৃণভূমি”, “প্রেমের প্রথম পাঠ”, “বন্যা”, “নিশিমৃগয়া“, “কামনার সুখদুঃখ”, “নিশিলতা”, “এক বোন পারুল”, “কৃষ্ণা বাড়ি ফেরেনি”, “নৃশংস”, “রোডসাহেব“, “জানগুরু” ইত্যাদি।

তাঁর গল্প ও একাধিক গ্রন্থ ভারতের সমস্ত স্বীকৃত ভাষায় অনূদিত হয়েছে, এমনকি ইংরেজিতে তো বটেই, বিশ্বের বহু ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মোট ১৫০টি উপন্যাস ও ৩০৬টি ছোট গল্প লিখেছেন।

ক্ষুদে ও কিশোর পাঠকদের দাবি মেটাতে তিনি সৃষ্টি করলেন “গোয়েন্দা কর্নেল” নামে একজন রহ্স্যময় চরিত্র , যাঁর মাথা জোড়া টাক, ঠোঁটে চুরুট, অবসরপ্রাপ্ত মিলিটারি অফিসার, এখন প্রজাপতি ও পাখি দেখতে ভালোবাসেন ৷ অথচ তিনি অনেক অপরাধ ও হত্যার কিনারা করে শখের গোয়েন্দাগিরি করেন। “গোয়েন্দা কর্নেল” পাঠকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। “গোয়েন্দা কর্নেল সমগ্র“ খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত হয়ে চলেছে।

সিরাজ কলকাতায় পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন ষাটের দশকের শুরুতে ৷ দীর্ঘদিন আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিক হিসাবে চাকরি ও লেখালেখি সমানতালে চালিয়ে গেছেন। তাঁর জ্ঞান ও অধীত বিদ্যাসমূহ তাঁকে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসাবে বিদ্বানসমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইতিহাস,সমাজতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, বিজ্ঞান, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব - সব বিষয়েই তাঁর বিস্ময়কর জ্ঞান ও বিদ্যার গভীরতা তাঁকে পণ্ডিতমহলে উচ্চ আসন এনে দিয়েছে ৷

তিনি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংদাস পুরস্কার, রাজ্য সরকারের বঙ্কিম পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া ভূয়ালকা পুরস্কারসহ আরও অনেক অনেক পুরস্কার, সম্মান ও পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন ৷
তাঁর অনেক কাহিনী চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। “মানুষ ভূত” চলচ্চিত্র ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে মঞ্চে ক্রমাগত অভিনীত হয়ে চলেছে।


বরেন্দ্র বাংলার চারন কথক! বাংলা সাহিত্যের অতীব বর্নিল ব্যাক্তিত্ব সৈয়দ মুস্তফা সিরাজও চলে গেলেন। বহুমাত্রিকতা আর মাটির সোঁদা গন্ধে ভরা সেই ছক্কা মিয়ার টম টম আর মামার সাথে বেরুলেই গ্যাঞ্জাম, সেই সব অতি উপভোগ্য আর সরস লেখার অনিন্দ্য সুন্দর কিন্তু বিশাল প্রতিভাধর মানুষটি! ক্রমশ কমে আসছে আমাদের ছোটবেলার সব স্বপ্ন দেখানোর মানুষ গুলো কর্নেল আর আসবে না যেভাবে চলে গেল ফেলুদা ,কিকিরা ...বড় বেশি শুন্যতা প্রকট হচ্ছে বর্তমান কিশোর সাহিত্য অঙ্গনে ।

শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করলাম এই কথাসাহিত্যিকের প্রতি।
সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ'র সাহিত্যকর্ম দীর্ঘজীবি হোক।



সহযোগী সূত্র- আনন্দবাজার , ৩৬৫ দিন । 


Previous Post Next Post

বিজ্ঞাপন