প্রজাতন্ত্র ও আমরা …
প্রজাতন্ত্র আর রাজতন্ত্রের সেই বস্তাপচা গল্পটা আর শোনানো হলো না মেয়েটাকে!
বরঞ্চ,আমার কিশোরী মেয়ে আয়ত দুচোখে স্বপ্নকাজল মেখে প্রত্যয়ী গলায়
আবৃত্তি করলো- গত ৬৫ বছরের পুরানো “ঝুটা আজাদি”-র পান্ডুলিপি।
মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতা হয়ে শুনে গেলাম সে ধূসর পান্ডুলিপির “ অ থেকে ং- ঃ “পর্যন্ত।
কত যে সাবলীল গাঁথা, কত বিমূর্ত ভাবনা চলমান দৃশ্যকল্পের মত সাজানো ছিল
ঘটমান বর্তমানের পরতে পরতে, পান্ডুলিপির পাতায় পাতায়।
নিঃসঙ্গ আলাপে ঘুমপাড়ানিয়া সুরে শুনছিলাম কেমন করে-
এঁটো শালপাতার মত বাসী পুরানো রাজনীতির বুলি,
ভন্ড জাতপাত, স্বাধীন সমাজে ছোঁয়াছুঁয়ির অসম বিভেদ,
জলচল ভালোবাসার করুন পরিনতি, নারী নির্যাতন,
বিশ্বাসের ভিটে নড়ানো দেশবিভাগ, জংলী প্রদেশিকতা,
অশিক্ষা ,কুসংস্কার, রূপালী জগতের অন্ধ অনুকরন, না মেটা ক্ষুৎ পিপাসা,
ধর্মের নামে বিকিয়ে যাওয়া না মানুষের সাম্প্রদায়িক কাহিনী,
বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে অপাপবিদ্ধ সরল মানবিকতার শিরায় শিরায়।
সময়ের সাথে,সময়ের স্রোতে,মানুষের ভীড়ে, ধীরে ধীরে
স্বাধীন প্রজাতান্ত্রিক দেশের প্রজাদের চাহিদাগুলো কিভাবে হাওয়ায় ভেসে উড়ে গেছে
দেশন্নয়োনের অলীক বিশ্বাসে,স্বার্থাণ্বষী কিছু দেশনেতাদের বিষ নিঃশ্বাসে।
আর প্রগতির সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে তুড়িতে তুড়িতে ফুলকি ছিটিয়ে
আতশবাজির মত আলো ঝরিয়ে নিভে গেছে স্বাধীনতার সোনালী স্বপ্ন।
এরপর কেটে যায় কত মুহূর্ত.কত দিন, কত রাত।
রোজ দিন শেষে, সুয্যি ঢলে, রোজ রাত ফুরোয়, চাঁদ নিভে যায় ;
তবু প্রজাতন্ত্র আর রাজতন্ত্রের সেই বস্তাপচা গল্পটা আর শোনানো হয় না মেয়েটাকে!
বরঞ্চ,আমার কিশোরী মেয়ের মত আরো অনেক গুলো কচি দৃপ্ত কণ্ঠস্বর
এক সাথে, একসুরে, দেশের সর্বত্র, আনাচে কোনাচে, গুনগুনিয়ে দুলে দুলে
আবৃত্তি করে যায় গত ৬৫ বছরের পুরানো “ঝুটা আজাদি”-র পান্ডুলিপি।
কলকাতা ।